হোষ্টেল জীবন

 আমার হোষ্টেল জীবন

আমি তখন ছোট্ট একান্ত! সবে মাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে উঠেছি!  আমি ঢাকার উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পার করেছি।  আমার হোষ্টেলে যাওয়ার অনেক কারন আছে, তার মধ্য বাবা, মা র ইচ্ছে তা ছিলো অন্যতম আমাকে হোষ্টেলে রেখে পড়ানোর।  আমি আমার কারণ গুলো বলি হয়তো এই কারনগুলোর জন্য আমাকলে হোষ্টেলে রাখা, ৪র্থ শ্রেনী থেকে আমি স্কুলে নিয়মিত না, আমি ক্লাশ ফাকি দিয়ে বন্ধু দের সাথে খেলতে চলে যেতাম ফুটবল খেলা ছিলো আমার প্রিয় আমি খেলতাম স্কুলের ব্যাগ গুলো একপাশে রেখে.... আমরা অনেকেই ছিলাম স্কুলের নাম করে ব্যাগ নিয়ে বের হতাম ঠিকই কিন্তু স্কুল পর্যন্ত আর যাওয়া হতোনা!! এভাবেই পার করলাম ৪র্থ শ্রেনী তারপরও ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। যায়হোক ৫ম শ্রেনীতে উঠেও একি দশায় পরলাম তখন ভিডিও গেম খেলতাম উত্তর বাড্ডা বাজারের এক কোণায় ছিলো ভিডিও গেমস এর দোকান। টিফিনের টাকা দিয়ে খেলা শুরু করলাম এভাবে এমন এক নেশায় পড়ে গেলাম ভিডিও গেমস এর টিফিনের টাকা আর হয়না বেশি টাকা লাগে এখন।  মা আর বাবা সন্দেহ করা শুরু করে দিলো আমি কি করি এত টাকা দিয়ে এতো ছোট মানুষ তারপর আবার দিনে ৫০/৬০ টাকা নেয় ব্যপার কি??  স্বাভাবি সন্দেহ হওয়ারই কথা এত টাকা দিয়ে আমি কি করি সেটা জানা মা বাবার কৌতুহল।  বাবা একদিন স্কুলে গেলেন কি স্যার দের সাথে কথা বললেন??  স্যার রেজিস্ট্রার খাতা চেক করে বললেন একান্ত গত ২মাস ধরে স্কুলে আসেনা!!  বাবার তো আরো সন্দেহ করা শুরু করলো স্কুকেও আসেনা আবার টাকা দিয়ে কি করে??? 

আমার এক বাঙালী বন্ধু সিপন কে দিয়ে খোঁজ লাগালো সে জানতো আমি কোথায় গেমস্ খেলি সে সোজা নিয়ে গেলো সেই উত্তর বাড্ডার কাঁচাবাজারের দোকান টি তে। দোকান টি ছিলো ছোট, একটাই রাস্তা পালানোর কোন রাস্তা নেই আমাকে আমার বাবা সেখানে গিয়ে আবিস্কার করলো! পালানোর রাস্তা থাকলে হয়তো আবিস্কার করতে পারতোনা।  আমাকে নিয়ে গেলো পুলিশী কায়দায়!  আমি অপরাধীর মত বাসায় গেলাম বাসায় নেওয়ার পর আমার উপর দিয়ে চলেছিলো ২ঘন্টা রিমান্ড একদিনের জন্য খাওয়া বন্ধ!।

আবার সেখান থেকে স্কুলে রেগুলার ছিলাম।  ৫ম শ্রেনীর পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাকে পাঠানো হলো এক  হোষ্টেল নামক জেলখানায়।  জানুয়ারিতে আমিও আবিস্কার করলাম নতুন জায়গা নেতাই নদীর পাশে থাকা ভালুকা পাড়া নামক এক স্থান।  শুরু হলো হোষ্টেল জীবন।  একা একা থাকতে হলো একমাস মন খারাপ পরিচিত কেউ নেই আসতে আসতে পরিচয় পর্ব শেষ করতে লাগলো ১মাস।  ২য় মাসে হোষ্টেল থেকে বিধায় নেওয়ার উপক্রম,,  একজন ছেলে কে পিটিয়ে ছিলাম। এমন পিটিয়েছিলাম যে তার এক হাত ফুলিয়েছিলাম।  সেও আমার কেউ ছিলোনা আমারই এক আত্মীয় ভাই,  যায় সেবার এক বড় দাদার কারনে বেঁচে গেলাম আমাকে আর যেতে হয়নি বাড়িতে।

হোষ্টেল জীবন আসলেও এক জেল খানা নিয়ম মাফিক কাজ করতে হয় বাইরে বের হওয়া যায়না, খাবার গুলো খাওয়ার মত না এক বেলা খাবার পেলে আরেক বার পেতাম না।  সৃজন মাফিক খাবার শীতের সৃজনে মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, এসব ছিলো খাবারের তালিকায়! বর্ষাকালে ডাল আলু ভর্তা,আলুবাজি, পাটশাক,। 

সব স্কুলের টিচারের কাছে আমি অনেক ভদ্র ছিলাম, কিন্তু আসলেও টা ছিলাম না যে আমার সাথে ছিলো সেই আমাকে ভালো চিনতো।। কিন্তু রেগুলার ক্লাশে যেতাম,রেগুলার পড়া দিতাম বাইরে যায় কিছু করি কিন্তু পড়া লেখা ঠিক মত দিতাম এর জন্যই আমাকে টিচার রা ভালো পেত।

অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটা আমি আবিষ্কার করেছি হোষ্টেলে থাকা অবস্থায় একবেলা খেলে যেমন আরেক বেলা পেতাম না সেই অভাবে আমরা গাছের কাঁঠাল, পেয়ারা, পুকুরের মাছ, আর যা কিছু ফলফলাদি ছিলো চুরি করে খেতাম,,  সেই চুরি করে খাওয়ার মাঝে একটা  আনন্দ আছে। নেতাই নদীতে তো কতবার গা ভাসিয়ে গোসল করেছি তার কোন হিসেব নেই।  আমরা যেখান দিয়ে গোসল করতাম সেখান থেকে একটু দূরে নদী পার করে বড়ই খেতে যেতাম নদীর একপাশ থেকে আরেকপাশে। পরিশেষে,

হোষ্টেল জীবন জেলখানা হলেও অনেক কিছু শেখার আছে,জানার আছে,আনন্দ আছে,বেদনা আছে সব কিছু মিলিয়ে হোষ্টেল জীবন।

আপনার সন্তান কে হোষ্টেলে একবারের জন্য হলেও পাঠাবেন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য হলেও!

ধন্যবাদ

Comments

Popular posts from this blog

আমি নারী

মিতালী

থংক্ষান্থি (অর্ধেক)