আমার দেখা সেইকাল আর বর্তমান কাল)


(আমার দেখা সেইকাল আর বর্তমান কাল)
আমি ছোট্ট একান্ত। প্রাইমারি তে পড়ি। আমাদের স্কুলের নাম কাতলমারী সাধু পিতর প্রায়মারি স্কুল। আমার নানা আমাকে স্কুলে নিয়ে যায় ছুটির সময় আবার নিয়ে আসে। নানার সাথে কাটিয়েছি আমার শৈশবের দিনগুলো। তিনি আমার একাধারে বন্ধু, বান্ধবী, পিতামাতা,ভাই বোন, নানা,দাদা,তিনিই সব। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন খালেবিলে প্রচুর মাছ, জিনিস পত্তের দাম ছিলো হাতের নাগালে, কিন্তু টাকার মান ছিলো অনেক।  একটা টাকা দিয়ে ৪টা আনার কলি নামে লজেন্স পাওয়া যেত যদি ৫টাকাও নিজের হাতে থাকে তবে নিজেকে কোটি টাকার মালিক মনে করতাম। ৫টাকায় অনেক কিছু পাওয়া যেত ২টাকার চানাচুর ৩জনে খেয়ে শেষ করতে পারতাম না। বুত যদি কিনে খায় তো দাঁতের মারি বেথা লাগতো। বাজারে হরেক রকমের খেলনা পাওয়া যেত।  এখন সেই ৫টাকা দিয়ে ভালো মানের লজেন্স পাওয়া যায়ইনা, খেলনা তো দূরের কথা। বাজারে গেলে লোকের সমাগমে হারিয়ে যেতাম একবার আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম কত কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছিলাম আমার নানা কে। আমি বুদ্ধি করে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ছিলাম বলে আমাকে খুঁজে পেয়ছিলো।  আর এখন সেই বাজারগুলোতে লোক তো দূরে থাক একটা মাছিও খুঁজে পাওয়া যায়না।  ছোটকালে আমরা টিভি দেখার জন্য এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যেতাম সেই অনুভূতিও ছিলো অন্যরকম দলবেঁধে একসাথে টিভি দেখতে যাওয়া। রাজ্জাক সাবানার অভিনয় দেখে অনেকেই হুহু করে কাঁদতো।  জায়গা হারানোর ভয়ে একটা জায়গাতেই বসে থাকতাম কোন নরচর করতাম না। এত লোক জমা হতো যে বাড়ির উঠোনে পর্যন্ত জায়গা হতোনা এক পলক দেখার জন্য হলেও লোকের সমাগম হতো।  আর এখন টিভি তো দুরের কথা কম্পিউটার ডেস্কটপ কারো বাড়িতে স্থান পায়না ওজন আর জায়গা কম বলে কেউ রাখেনা। আগে দেখতাম শিক্ষিত লোকেরাই সাইকেল আর মোটরসাইকেল চালাত হয়তো আগেকার
দিনে হয়তো রীতি ছিলো।  আর এখন ঘরে ঘরে মোটরসাইকেল।  যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিলো না তবুও বাজারঘাটে লোকের কমতি দেখিনি। আমার টিভি দেখতে দেখতে একটা নেশা হয়েগিয়েছিলো আমি ভিসিআর দেখতে একগ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলে যেতাম সারারাত থাকতাম যতক্ষণ না বড় ভাইয়েরা ভিসিআর জমা দিচ্ছে ততক্ষণ থাকতাম ভিসিআর দেখার তালে কয়েকদিন তো বাড়িতেই যেতাম না। ভিসিআর আনতো ভাড়া করে। 
আগে এমন একটা দিন ছিলো যে সেই দিন গুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। আগে বড়দের সম্মান দিতো, বড় ভাই বড়দের জায়গায় মুরব্বিরা মুরব্বিদের জায়গায় শৃঙ্খলা বোদ্ধ ছিলো সমাজ ব্যবস্থা আর এখন আপন ভাই কেউ সম্মান দেয়না আপন বড় ভাইয়ের সামনে বিড়ি টানি।  আগে এলাকার বড় ভাইয়ের যে সিদ্ধান্ত নিতো সেটাই চুড়ান্ত হতো আর এখন নিজের সিদ্ধান্ত মানেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। 
আগের দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা। অনেক অনেক মনে পরে ফেলে আসা ছোটকালের দিনগুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।

Comments

Popular posts from this blog

আমি নারী

মিতালী

থংক্ষান্থি (অর্ধেক)